ক্ষুরাভ্যাক্স সম্পর্কিত

ভ্যাকসিন কখন দিতে হবে?

প্রাথমিক ভ্যাকসিনেশন:

  • ১-১.৫ মাস বয়সে (যদি গাভীকে শেষ ট্রাইমেস্টারে ভ্যাকসিন না দেয়া থাকে)
  • ৩-৪ মাস বয়স এবং এর পর থেকে (যদি গাভীকে শেষ ট্রাইমেস্টারে ভ্যাকসিন দেয়া থাকে)

বুস্টারঃ প্রাথমিক ভ্যাকসিনেশনের ১-১.৫ মাস পর

রি-ভ্যাকসিনেশনঃ বুস্টারের পর প্রতি ৬ মাস এবং আক্রান্ত এলাকায় যেমন বাংলাদেশে প্রতি ৪ মাস পর পর।

ক্ষুরাভ্যাক্স কত মাত্রায় এবং কোথায় ইনজেকশন আকারে দিতে হবে?

গরু, মহিষ ও বাছুর: ২ মি.লি. ডিপ গ্লুটিয়াল মাংসপেশীতে
ছাগল ও ভেড়া : ১ মি.লি. গ্লুটিয়াল মাংসপেশীতে
১ম ভ্যাকসিনেশন: ৩-৪ মাস বয়স এবং এর পর থেকে
বুস্টার: প্রাথমিক ভ্যাকসিনেশন-এর ১-১.৫ মাস পর
রি-ভ্যাকসিনেশন: প্রতি ৪-৬ মাস পর পর।
অথবা রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারিয়ান-এর পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার্য।

ক্ষুরাভ্যাক্স ভ্যাকসিন কোথায় পাওয়া যাবে?

দেশের সর্বত্র ভেটেরিনারি ফার্মেসীতে পাওয়া যাচ্ছে।

ক্ষুরারোগের কোন ভ্যাকসিন কি ১০০% রোগ প্রতিরোধ করে?

কোন ভ্যাকসিনই ১০০ % রোগ প্রতিরোধ করতে পারে না, যেমন মানুষের পক্স, করোনা ইত্যাদি। ও.আই.ই. এর গাইড লাইন অনুযায়ী ক্ষুরারোগের ভ্যাকসিন যদি ৭৫% পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধ করে তাকে একটি স্ট্যান্ডার্ড কোয়ালিটি ভ্যাকসিন বলা হয়। ফিল্ড ট্রায়াল রিপোর্ট এ দেখা গেছে ক্ষুরাভ্যাক্স ৮০% এর বেশি গরুকে প্রতিরক্ষা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৪০৮,৭৬৫ টি গরুকে ক্ষুরাভ্যাক্স দেয়া হয়েছে এবং ফলাফল অত্যন্ত সন্তোষজনক।

কি কি কারণে ক্ষুরারোগর ভ্যাকসিন অকার্যকর হতে পারে?

  • ভ্যাকসিন ভাইরাসের সাথে স্থানীয় ভাইরাসেরর মিল না থাকলে
  • ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কম থাকলে
  • ভ্যাকসিন মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে
  • সঠিক মাত্রা ও সঠিক নিয়মে ভ্যাকসিন প্রয়োগ না করলে
  • বুস্টার ভ্যাকসিন না করলে
  • ভ্যাকসিনের মাত্রার সংখ্যা ও সময় ঠিক না থাকলে
  • প্রাণিতে সুপ্ত অবস্থায় ক্ষুরারোগ থাকলে
  • প্রাণি অপুষ্টিতে ভুগলে
  • প্রাণির ভ্যাকসিনের প্রতি ইমুউন রেসপন্স কম করলে
  • ভ্যাকসিনের সংরক্ষণ তাপমাত্রা না মেনে সংরক্ষণ ও সরবরাহ করলে।

ক্ষুরারোগের ভ্যাকসিন কি নিরাপদ?

  • হ্যাঁ। ক্ষুরারোগের ভ্যাকসিন অত্যন্ত নিরাপদ। যেহেতু ভ্যাকসিনের জীবাণু জীবিত নয়, তাই ক্ষুরারোগের ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ নিরাপদ।
  • এই ভ্যাকসিন দেয়ার পর উল্লেখযোগ্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও নেই।

একটি গরুকে ভ্যাকসিন দিতে বছরে কত খরচ হবে? সেই খরচ করেও খামারি কি লাভবান হবেন?

১ম বছরে
প্রাথমিক ভ্যাকসিনেশন : ৩-৪ মাস বয়স এবং এরপর থেকে (৭০ টাকা)।
বুস্টার : প্রাথমিক ভ্যাক্সিনেশন-এর ১ মাস পর (৭০ টাকা)।
রি-ভ্যাকসিনেশন : বুস্টার-এর পর প্রতি ৪ মাস পর পর (৭০ টাকা X৩=২১০ টাকা) ।
মোট খরচ=৩৫০ টাকা ।
২য় বছর থেকে ৩টি ভ্যাকসিনে ২১০ টাকা খরচ হবে।
ষাঁড়ে একবার ক্ষুরারোগ হলে ৫-১৫ কেজি ওজন কমে যেতে পারে। মাংস হিসাবে যার মূল্য ৫০০০ টাকার বেশি হবে।
ক্ষুরারোগে ২০% দুধ উৎপাদন কমলেও ৫ কেজি দুধ দেয় এমন গাভীতে বছরে ক্ষতি
দৈনিক ক্ষতি ৫ কেজি X ০.২=১ কেজি
বছরে ৬ মাস দুধ দেয় এমন গাভীতে ক্ষতি
৬ মাসে ক্ষতি =৬ X৩০X১=১৮০ কেজি
আর্থিক ক্ষতি= ১৮০ X ৫০=৯০০০ টাকা (প্রতি কেজি দুধের দাম ৫০ টাকা হিসাবে ধরা হয়েছে )
তাই খামারী অবশ্যই লাভবান হবেন।

ক্ষুরাভ্যাক্স কি আমাদের দেশের আবহাওয়ায় কাজ করবে?

  • হাঁ, কারণ এই ভ্যাকসিন আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে মানানসই ।

ক্ষুরাভ্যাক্স কি লোকালী বাংলাদেশী গরুর উপর টেস্ট করা হয়েছে?

  • হাঁ, এটি বাংলাদেশী গরুর উপর সফলভাবে পরীক্ষিত একমাত্র ভ্যাকসিন।

ক্ষুরারোগ সম্পর্কিত

ক্ষুরারোগ কি?

ক্ষুরারোগ গবাদি প্রাণির একটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ। এ রোগে দুধ উৎপাদন ও ওজন আকস্মিকভাবে কমে যায় এবং কখনোই আগের উৎপাদনে ফিরে যায় না। ক্ষুরারোগের কারণে বাংলাদেশে বছরে ১০০০ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়।

ক্ষুরারোগ কি কারণে হয়?

ক্ষুরারোগের ভাইরাস ও, এ, এশিয়া ১ এই ৩ টি স্ট্রেইন দিয়ে বাংলাদেশে মূলত ক্ষুরারোগ হয়ে থাকে। তবে সারা পৃথিবীতে মোট ৭টি স্ট্রেইন দিয়ে ক্ষুরারোগ হয় , ৭টি স্ট্রেইন ও, এ এবং এশিয়া ১, সি, স্যাট ১,২,৩ নামে পরিচিত।

কোন কোন প্রাণির ক্ষুরারোগ হয়?

গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার ক্ষুরারোগ হয়ে থাকে।

কিভাবে ক্ষুরারোগ ছড়ায়?

আক্রান্ত প্রাণির লালা, ক্ষতের রস, মলমূত্র, দুধ,ব্যবহার্য সামগ্রী এবং বাতাসের মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

ক্ষুরারোগ কতটা সংক্রামক?

ক্ষুরারোগ একটি প্রাণী থেকে অন্য প্রাণিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শীতল, স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় যখন অনেক প্রাণী এক সাথে রাখা হয় তখন এটি খুব সহজেই ছড়ায়।

ক্ষুরারোগ কখন দেখা যায়?

বাংলাদেশে প্রায় সারা বছরই এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তবে বর্ষা ও শীতকালে ক্ষুরারোগ বেশি দেখা যায়।

ক্ষুরারোগ কি মানুষে ছড়ায়?

এটি মানুষে ছড়ায় না এবং এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়।

ক্ষুরারোগ এর লক্ষন কি কি?

  • প্রচুর লালা ঝরে, মুখ গহ্বর ও জিহ্বায় ক্ষত সৃষ্টি হয়।
  • মুখ, পা ও ওলানে রসভরা ফোস্কার সৃষ্টি হয় ও রস ঝরে।

ক্ষুরারোগ হলে খামারী কিভাবে ক্ষতির মুখে পড়েন?

  • ক্ষুরারোগ একবার হলে দুধ উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যায় যা আর কখনোই আগের অবস্থায় ফিরে যায় না।
  • একবার ক্ষুরারোগ হলে ৫-১০ কেজি পর্যন্ত ওজন কমতে পারে যাতে ৫০০০ টাকার বেশি ক্ষতি হতে পারে।
  • বাছুরের এ রোগ হলে মারাও যেতে পারে।

কোন কোন প্রাণির ক্ষেত্রে ক্ষুরারোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি?

বয়স্ক ও গাভীর তুলনায় কম বয়সী বাছুর এবং পুরুষ প্রাণিতে ক্ষুরারোগের সংক্রমণ বেশী দেখা যায়।

ক্ষুরারোগের ও.আই.ই. ম্যাপিং কি?

কোন এলাকায় কোন সেরোটাইপ ভাইরাস দিয়ে ক্ষুরারোগ হয়, তার উপর ভিত্তি করে ও.আই.ই. সারা বিশ্বকে ৭টি পুল-এ ভাগ করেছে, এটিই ক্ষুরারোগের ম্যাপিং। যেমন বাংলাদেশ রয়েছে পুল-২ এ।

ক্ষুরারোগের ম্যাপিং গুরুত্বপূর্ণ কেন?

যে পুলে যে ভাইরাসের কারণে ক্ষুরারোগ হয়, সেই পুলে ক্ষুরারোগের ভ্যাকসিন ঐ পুলের ভাইরাস দিয়ে তৈরী করে ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে এক পুলের ভ্যাকসিন অন্য পুলে কাজ নাও করতে পারে। তাই পুল ম্যাচিং ভ্যাকসিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ইনসেপটার ক্ষুরাভ্যাক্স ভ্যাকসিন পুল-২ এর ভাইরাস থেকে তৈরী। তাই পুল ম্যাচিং নিশ্চিত করা হয়েছে।

ক্ষুরারোগ ব্যবস্থাপনা

ক্ষুরারোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?

  • স্থানীয় ভাইরাসের সাথে মিল রেখে তৈরী একটি কার্যকরী ভ্যাকসিনই পারে ক্ষুরারোগ প্রতিরোধ করতে।
  • সময়মত ক্ষুরাভ্যাক্স ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে।
  • আক্রান্ত খামার/প্রাণি হতে রোগ যেন কোন ভাবে সুস্থ প্রাণিতে সংক্রমিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ক্ষুরারোগের চিকিৎসা কি?

  • ক্ষুরারোগ ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ার কারণে এর কোন চিকিৎসা নেই।
  • তবে সেকেন্ডারী ইনফেকশন রোধ এবং অন্যান্য জটিলতা থেকে মুক্ত রেখে মৃত্যুহার কমানোর জন্য এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে এবং সাথে জ্বর বা ব্যথানাশক ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

একটি খামারে অনেকগুলো প্রাণির মধ্যে ১ টি প্রাণিতে ক্ষুরারোগ হলে খামারি কি কি পদক্ষেপ নিবেন?

  • আক্রান্ত প্রাণিকে আলাদা করতে হবে।
  • আক্রান্ত প্রাণিকে চিকিৎসা করাতে হবে, সুস্থ হলে ভ্যাকসিন করাতে হবে।
  • অন্যান্য সব প্রাণিকে ভ্যাকসিন করাতে হবে।
  • আশেপাশের খামারীদেরকে ভ্যাকসিন করাতে উৎসাহিত করতে হবে।

কোন অবস্থায় ভ্যাকসিন দেয়া উচিৎ নয়?

সংক্রমিত এবং রোগের সুপ্তিকালে থাকা প্রাণীতে ভ্যাকসিন দেয়া উচিৎ নয়। যে সমস্থ প্রাণী সংক্রমিত এবং সংক্রমিত হওয়ার সন্দেহ রয়েছে তাদের ভ্যাকসিন দেয়া উচিৎ নয়।

কোন অবস্থায় ভ্যাকসিন নাও কাজ করতে পারে?

ক্লিনিক্যালি অসুস্থ অথবা মারাত্নক শুকনো অথবা ধকলে থাকা অবস্থায় ভ্যাকসিন দিলে রেজাল্ট পাওয়া যাবে না।

এই ভ্যাকসিন দিলে প্রাণির ধকল কি খুব বেশি হবে?

না। তবে গর্ভবতী প্রাণির উপর ধকল পড়ে । এই ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

ভ্যাকসিন দেয়ার পর খামারিকে আর কি কোন পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে ক্ষুরারোগ না হয়?

  • জীবনিরাপত্তা মেনে চলতে হবে; যেমনঃ খামারে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, অপ্রয়োজনীয় লোক যাতায়াত সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
  • সরঞ্জাম পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
  • পরিচর্যাকারী অন্য খামারে যাবে না।

আক্রান্ত হওয়ার কয়দিন পরে গরুকে এই ভ্যাকসিন দেয়া যাবে?

পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পরে গরুকে এই ভ্যাকসিন দেয়া যাবে। এই ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যালি অসুস্থ অবস্থায় দেয়া যাবে না।

সময়মতো টিকা দিলে ক্ষুরা রোগের আক্রমণ প্রতিহত করা যায়

ক্ষুরাভ্যাক্স, বাংলাদেশে তৈরি ক্ষুরারোগের ভ্যাকসিন

বাংলাদেশ বনাম বিশ্বে গরু ও গরুর মাংস উৎপাদন (ক্ষুরারোগের ভ্যাকসিন ক্ষুরাভ্যাক্সঃ ও, এ, এশিয়া ১ স্ট্রেইন)

বাংলাদেশ বনাম বিশ্বে গরুর দুধ উৎপাদন (ক্ষুরারোগের ভ্যাকসিন ক্ষুরাভ্যাক্সঃ ও, এ, এশিয়া ১ স্ট্রেইন)

ক্ষুরারোগ নিয়ে নাটিকা ( ক্ষুরাভ্যাক্স, বাংলাদেশে তৈরি ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন )

৪০ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ স্মরণী তেজগাও আই/এ
ঢাকা – ১২০৮, বাংলাদেশ

ইমেইল: info@inceptavaccine.com

কপিরাইট © ২০২৪ ক্ষুরাভ্যাক্স সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
ডিজাইন এন্ড ডেভেলপড